হতাশা বনাম চেষ্টা

ইন্সপাইরেশন আমাদের আশে পাশেই আছে। শুধু দরকার একটু খানি ইচ্ছা.... তেমন একটি বাস্তব গল্প আজ তুলে ধরা হলো।

তিন প্রফেই প্রথম হওয়া তো দূরের কথা, আমার তো ডাক্তার হবারই কথা ছিলনা!

আমি বরাবরই ছিলাম অংক পাগল। ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই ছিল জীবনের লক্ষ্য। বুয়েটে ভর্তির জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাও দিলাম, আর অবাক করা ব্যাপার কিভাবে যেন ডিএমসিতে চান্স পেয়ে গেলাম। এই ঘটনার পরই মূলত মা বাবার ইচ্ছাতেই ডাক্তারি পড়া। আমাকে বলা হল, পরিবারে কোন ডাক্তার নাই, তো আমিই কেন না বংশের প্রথম ডাক্তার হই?

ডিএমসিতে আসার পর প্রথম প্রথম খুবই কষ্ট হত। যেহেতু ডাক্তারি পড়ার কোন পরিকল্পনা ছিলনা, ভালই সমস্যায় পরলাম। ম্যাথ অনেক মিস করতাম। পরিস্থিতি পাল্টালো আমার প্রথম কার্ড পরীক্ষার রেসাল্টের পর। এই পরীক্ষার ভাল ফলাফলই ডাক্তারির প্রতি আমার আগ্রহ বাড়িয়ে তুললো।

তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর আমি মেডিকেলের প্রকৃত আনন্দ পেতে শুরু করলাম। আমার ক্লিনিকাল পড়াশোনা শুরু হয় মেডিসিন দিয়ে এবং আমার প্লেসমেন্ট হয় খান আবুল কালাম আজাদ স্যারের ওয়ার্ডে। তিনি আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিতেন। মূলত ওনার কারণেই মেডিসিনের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে যদিও পরবর্তীতে সার্জারির প্রতিই ভালবাসাটা রয়ে যায়। এখন আমি পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন করছি সার্জারিতে।

যে প্রশ্নটার মুখোমুখি সবসময়ই হই তা হল যেখানে প্রফে পাশ করাই এক বিশাল ব্যাপার সেখানে তিন প্রফেই প্রথম হওয়া কিভাবে সম্ভব। আমি মনে করি আমার সাফল্যের চাবিকাঠি হল একাগ্রতা আর পরিশ্রম। আমি সবসময়ই মেধার চাইতে পরিশ্রমকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ডিএমসিতে আমার সকল ব্যাচমেটই অসম্ভব মেধাবী। এত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মাঝখানে ভালো করার জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। ওয়ার্ডের পড়াশোনাকে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দিতে হবে। পড়তে হবে পেশেন্টকে কেন্দ্র করে। এত মোটা মোটা বই মুখস্ত করা কি জরুরি? মোটেই না। তোমার লেভেলে যতটুকু দরকার ওইটুক পড়লেই যথেষ্ট। যেটুকু পড়েছ সেটাকে পেশেন্টের সাথে মিলিয়ে পড়, তাহলে কখনই পড়া ভুলে যাবেনা।

সাফল্যের জন্য যে গুনটা সবচেয়ে জরুরি তা হল কখনো হার না মানার মানসিকতা। আমি স্বীকার করি যে আমিও এমন একটা সময় পার করেছি যখন হতাশা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। কিন্ত আমি কখনোই লক্ষ্যহারা হইনি। তুমি পথে কত আস্তে আগাচ্ছো বা কত বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছো তা কখনোই কোন বিষয় না, যতক্ষণ না তুমি তোমার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছ।

Dr. Urmeeta Dutta
DMC K-67
Honorary Medical Officer, Surgery Unit 3,
Dhaka Medical College Hospital

Comments

  1. হুম চেষ্টা করলে আল্লাহ নিশ্চয় সাহায্য করেন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

আমি মোটা

বিয়ে পরবর্তী একটি হানিমুনের গল্প