মৃত্যু দিয়ে প্রতিশোধ

#এক_মৃতার_ডায়েরি
#অর্পিতা_চন্দ্র

(১৫ই জানুয়ারি, ২০১৭)
আজ তোমার আসল রূপটা দেখলাম। দেখে যে অবাক হইনি সেটা বলা ভুল হবে, কিন্তু কিছুটা এরকমই আশা করেছিলাম। আজ পাঁচ মাসও হয়নি আমাদের বিয়ের আর তুমি আমার গায়ে হাত তুললে তোমার মায়ের কথায়। আজ নিজের উপর খুব অভিমান হচ্ছে, বাবা কতবার বারণ করেছিল তোমাকে বিয়ে না করতে, আমি শুনিনি, কারণ আমি যে তোমার মিথ্যা ভালোবাসা টাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার ছোট ছোট স্বপ্ন গুলোকে দুজনে মিলে পূরণ করব। নাহ্,স্বপ্ন গুলো সত্যি হওয়া অনেক দূর সেগুলো আরও টুকরো হয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে আমাকে।

(২০ জানুয়ারি, ২০১৭)
আজ আরও একবার, আরও একবার আমার গায়ে হাত তুলেছ তুমি। আমি সেই আগের 'তুমি'র সাথে এই 'তুমি'কে বড্ড বেশি গুলিয়ে ফেলছি জানো। তোমার মধ্যে কি আমার জন্য এতটুকু ভালোবাসা জন্মায়নি! যা ছিল সবই কি নাটক! জানি এত প্রশ্ন করে আজ আর কোনো লাভ নেই, আমি যে আজ নিজের কাছেই নিজে মুখ লুকাতে লজ্জা বোধ করছি। 

(৩০শে জানুয়ারি, ২০১৭)
আবার আবার, আজ আবার। কিন্তু, আজ বোধহয় আমি হেরে গেলাম সত্যি করে। এতদিন তোমার প্রতিদিনের মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে অকথ্য ভাষায় কথা বলা থেকে তোমার ওই কঠিন হাতের আঘাতের প্রমাণ গুলোকে নিজের শরীরে বয়ে নিয়েছি চোখের জলের দাম দিয়ে। ভেবেছিলাম কোনো একদিন আমাকে বারংবার আঘাত করতে গিয়ে তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে উঠবে আমি তখন জয়ী হব নিজের কাছে। কিন্ত না, ধারণা ভুল ছিল। হেরে গেছি আমি, হেরে গেছি আমার শরীরে ওই অত্যাচারের আঁচড় গুলোর কাছে, হেরে গেছি যে এক বুক ভালোবাসা নিয়ে সুখ খুঁজতে এসেছিলাম তোমার সঙ্গে তাদের কাছে, হেরে গেছি আজ সকালে তোমার রাগের পরিণামে আমার গায়ে গরম ছুঁড়ে দেওয়া দুধের ওই পোড়া দাগ গুলোর কাছে। 
নাহ্ আর তোমার সাথে থাকার কোনো কারণ নেই। চলে যাচ্ছি আমি সবার নাগালের বাইরে, যেখানে হয়ত সব যন্ত্রণার অবসান হয়, সেই অজানার  উদ্দেশ্যে যেখানে অবসান হয় ক্ষোভ ভেদাভেদ সব কিছুর,সেখানে...
      
মেয়ের মৃতদেহের সামনে তার ডায়েরি  পড়তে পড়তে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মেয়ের বাবা, তার গড়িয়ে পরা চোখের জলের বিন্দু গুলো পৃষ্ঠার অক্ষর গুলোকে একটু মলিন করে দিল।
হায়রে! যদি এভাবে তার মেয়ের কষ্টটা মুছে ফেলা যেত তাহলে হয়ত এই দিন তাকে দেখতে হত না...

Comments

Popular posts from this blog

আমি মোটা

হতাশা বনাম চেষ্টা

বিয়ে পরবর্তী একটি হানিমুনের গল্প