চাকুরিজীবী মা!
I miss you mam!
______________
ঘটনা ১।
আমার আপুর (কাজিন) পাশের ফ্লাটের ঘটনা। ভদ্রলোক আর্মি অফিসার আর উনার ওয়াইফ ডাক্তার। সকাল হলে দুজনেই যার যার কাজে বেরিয়ে পড়েন। আপুর রান্নাঘর থেকে উনাদের রান্নাঘর দেখা যায়। কোলের বাচ্চাকে বুয়ার কাছে রেখে উনারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই বাচ্চাটা প্রচন্ড কাঁদতে থাকে। এটা প্রতিদিনের ঘটনা। একদিন বাচ্চাটা খুব কাঁদছিল। আপু রান্না ঘরে গিয়ে দেখে ওই বাসার রান্নাঘরের হাউজের মধ্যে বাচ্চাটাকে রেখে বুয়া ট্যাপ ছেড়ে দিয়েছে। আর বাচ্চাটা কাঁদছে। আপু, তাড়াতাড়ি করে বাসায় গিয়ে কলিংবেল দেয়। অনেকক্ষণ পর বুয়া দরজা খোলে, কোলে বাচ্চা। সারা গা ভেজা। আপু এসব ঘটনা বাচ্চার মাকে জানানোর পর উনি কি বলেছিলেন জানেন? “থাক ভাবী, এসব শুনবনা, এসব কথা আমলে নিলে কি আর চাকরী করতে পারব !”
.
ঘটনা ২।
এক মহিলার স্বামী বিরাট ধনী। বিশাল এরিয়ার উপর বাড়ি। তারপরও বউ শখের বশে চাকরী করে, আড়াই বছরের বাচ্চাটা থাকে কাজের মেয়ের কাছে। একদিন বাচ্চাটা খেলছে, আর কাজের মেয়ে এর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখে বাচ্চা নাই। সারা বাড়ি, আত্নীয় স্বজন প্রতিবেশিদের কাছে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে পাওয়া গেল না। পরে বাথরুমের দরজার কাছে দেখা গেল একটা স্যান্ডেল। আর বাচ্চাটা বালতির মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পানি ভরা বালতি উপুর হয়ে দেখতে গেছে, উলটে পড়ে গেছে, আর উঠতে পারেনি।
.
ঘটনা ৩।
মা পিএইচডি করতে যাচ্ছে, এয়ারপোর্টে সি অফ করতে গিয়ে তিন বছরের বাচ্চা মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদছে। আমাকে ছেড়ে যেওনা মা, আমাকে ছেড়ে যেওনা। কিন্তু পিএইচডির হাতছানি সন্তানের মাকে আঁকড়ে ধরে রাখার আকুতি থেকে বড় ছিল, মা পিএইচডি ডিগ্রি নিতে বিদেশে চলে গেলেন।
.
ঘটনা ৪।
মা অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠানের একটা উইং এর ডিরেক্টর। ছেলে থাকে দাদীর কাছে। মা বেশির ভাগ সময়ই শহরের বাইরে থাকেন। ছেলে এখন ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ে। কিন্তু দাদীকে মা বলে ডাকে। আর মায়ের থাকা না থাকা তার কাছে কোন গুরুত্বই বহন করে না।
.
ঘটনা ৫।
মেয়ের বয়স যখন ৩ মা মেয়েকে নানীর বাড়ী রেখে মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য অন্য এক শহরে যায়। যদিও প্রতি সপ্তাহ শেষে চলে আসত। মেয়ের আদর যত্নে কোন ত্রুটি হয় নি। কিন্তু মেয়েটা মায়ের সেই না থাকাটা বড় হয়েও ভুলেনি। ২২ বছর পর হঠাৎ একদিন মেয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে, আম্মু, তুমি আমাকে ছেড়ে পড়তে গিয়েছিলে কেন? মায়ের সরল জবাব, ওমা! না গেলে পড়ালেখা কমপ্লিট করতাম কিভাবে? মেয়ে সমস্ত ক্ষোভ চেপে রেখে ছোট করে জবাব দেয়, “তাহলে পড়াশোনা শেষ করার আগে বাচ্চা নিয়েছিলে কেন। একেবারে মাস্টার্স কমপ্লিট করেই সন্তান নেবার কথা ভাবতে।”
.
যে সকল মুসলিমা(মায়েরা) চাকরী করেও সংসার সামলাতে পারেন বলে দাবী করেন, বাচ্চা সামলাতে পারেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই একটা ব্যাপারে কিন্তু খুবই অবাক লাগে এবং বিচিত্রও লাগে! কোয়ালিটি টাইম!
.
এই ‘কোয়ালিটি’ টাইম বলতে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন আসলে? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনার দুধের সন্তানটা যে আপনাকে মিস করছে, সেই মিস করাটা আপনি কী কী দিয়ে পুষিয়ে দিতে পারবেন?
.
আপনার বাচ্চাটা পড়ে গিয়ে ব্যথা পেল, মায়ের বুকে যাবার জন্য চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, একটু দুধ খাবে-জ্বি না, ফিডার থেকে না, আপনার কাছে থেকে, আপনার মমতা, মায়ের বুকের নিরাপদ আশ্রয়, এই শূন্যতা আপনি কোন ‘কোয়ালিটি টাইম’ দিয়ে পূরণ করবেন?
.
বাচ্চার দাদী, নানী, বাবা এরা যখন মায়ের দায়িত্ব পালন করে, আপনার সন্তানের কাছে থেকে মায়ের জন্য প্রাপ্য ভালোবাসার শেয়ার যখন তারা নিয়ে নেয় কোন ‘কোয়ালিটি’ সময় দিয়ে সেটা আপনি ফেরত নেবেন?
.
কোন কোন মা বাধ্য হয়েই চাকরী করেন। অনেক সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু নিজের চাকরী করার পেছনে ওই সমস্যাগুলোকেই হাইলাইট করা উচিত। যেমনঃ আমার হাসবেন্ডের প্রেসারে আমি চাকরী করতে বাধ্য হয়েছি অথবা আমার স্বামী আমাদের খরচ দেয় না, বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ করে টাকা আনতে হয়।
.
কিন্তু আবার এমন অনেকেই আছেন যারা মা, মেয়ে, স্ত্রী হয়ে সন্তুষ্ট না, এই পরিচয় তাদের জন্য যথেষ্ঠ না, তারা “কিছু” করতে চায়, ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে’ চায়, স্বামীর মুখাপেক্ষি(?) হয়ে থাকতে চায় না, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে তাদের বাড়ির বাইরে বের হতেই হবে, একটা চাকরী করতেই হবে। পরিচয় সংকট ঘুচানো?
.
আপনি একজন ‘মা’- এটা আবার কোন পরিচয় হল?
সত্যি এটা কোন পরিচয় নয়, যখন আপনি কোমর থেকে খুলে আসা জিন্স প্যান্ট পরা সন্তানদের মা হবেন, কিন্তু আপনি যদি ইমাম বুখারীর মা হতেন,নিশ্চয়ই সেই পরিচয়ে আপনি খুশী হতেন- বলতেন- আমি উম্মে ইমাম বুখারী।
ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের জন্য মনোনীত করার মাধ্যমে অনুগ্রহ করেছেন। আমরা কি কখনো সেটা অনুভব করি? প্রতিটি বিষয়কে আল্লাহ পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছেন, এবং তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির জন্য অবস্থানের যথাযথ ক্ষেত্রও তিনি সৃষ্টি করেছেন। আসমান ও যমীনের সবকিছু কি নিপুণ ভারসাম্যের উপর নির্মিত! যত ভারসাম্যহীন আচরণ করে চলেছে এই কিছু মানুষেরাই। মানুষ আজকে পাখির মত উড়তে শিখেছে, মাছের মত সাগরের তলদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু যমীনের উপর মানুষের মত হেঁটে বেড়াতে ভুলে গেছে।
.
বিজ্ঞ পাঠক!
একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? আজকাল কর্মজীবী মায়েরা বাইরে কাজ করাকে কোন ঝামেলা বলে মনে করছে না, বরং বাড়িতে থেকে সন্তান পরিবার দেখাশোনাকেই তুচ্ছ, ছোট কাজ, নিচু কাজ বলে মনে করছেন- ওটা শুধু তারাই করবে, যাদের ‘কোন উপায় নেই’ , আমার এত ডিগ্রী! আমি কেন বাড়িতে থাকব! বা আমি বাড়িতে থাকতে চাই না বলেই এত পড়ালেখা করলাম, এখন রান্নাঘরে জীবন কাটাব?
.
কি আশ্চর্য ব্যাপার! আল্লাহ আপনাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবদ্দশায়ও উনার পিছে নামাজ পড়ার থেকে বাড়ীর সব থেকে ভেতরের ঘরে নামাজ পড়ায় মহিলাদের জন্য বেশি নেকীর কথা উল্লেখ করে গেলেন, মহিলাদের উপর কোন অর্থনৈতিক দায়িত্বও আমাদের রব্ব চাপিয়ে দেন নি, মাহরামের বাড়ীর মধ্যেই যাকে রাণী হয়ে থাকার মর্যাদা দিলেন সে কিনা মাঠে ময়দানে অফিসে কাজ করে রাণী থেকে চাকরাণী হতে চায়!
আসুন চাকরানী না হয়ে রাজরানীর মতো মা হই......
hmm asolei ma der dayitto gulo buja uchit
ReplyDeleteহুমম, তবে বুঝে কয়জন???
ReplyDeleteহুম সেইটাই।।।
Delete